হাওর অঞ্চল থেকে বিশেষ প্রতিনিধিঃ রাতের আঁধারে পল্লি গ্রামের রাস্তাঘাটে ভয়ানক আকার ধারণ করে অধিকাংশ অটোরিকশা। বাইকার ও পথচারীদের ভাষ্যমতে এলাকায় অধিকাংশ বাইক ও ছোট যানের সংঘর্ষের জন্য দায়ী অটো চালকরা। অটোচালকরা তাদের গাড়ীতে এমন এক ধরনের হাই পাওয়ারের এলইডি ফ্রগ ফিক্সড লাইট ফিটিং করে থাকে যা আপডাউনের ব্যবস্থা থাকে না। এতে করে সামনের পথচারী এবং ছোট যান চালকরা রাতে অতিরিক্তি আলোর জন্যে মুখোমুখি অবস্থান থেকে কিছুই দেখতে পান বলে মন্তব্য করেন। যে কারণে অধিকাংশ সময়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় বলে যুক্তি তোলে ধরেন। বিশেষ করে শীতকালীন সময়ে ঘণ কুয়াশাতে এই লাইট আরো বেশী ভয়ানক আকারের দুর্ঘটনার জন্ম দিয়ে থাকে বলে জানা গেছে। গ্রামের মোটর বাইক আরোহী ও বিভিন্ন ধরণের ছোট ভ্যান চালকরা এই দুর্ঘটনার স্বীকার বেশি হয়ে থাকে। শীতকালে এমনি তথ্য অধিক মিলে গ্রামের হাসপাতালে ও মোটর সাইকেল দোকানীদের কাছে।
কিশোরগঞ্জ বাজিতপুর এলাকার পিরিজপুর মূল রাস্তা সংলগ্ন মোটর সাইকেল মেরামতকারী কামরুল ইসলামসহ অসংখ্য গ্যারেজে গাড়ী মেরামতকারীদের সাথে কথা হলে তারা এ ধরনের বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরেন।
এছাড়াও হাওর ও গ্রাম অঞ্চলের অসংখ্য মোটরসাইকেল চালকদের সাথে কথা হলে তাদের ভাষ্যমতে, অটো চালকদের বেশীরভাগই সংকেত পর্যন্ত বুঝে না। সাংকেতিক চিহ্ন সম্পর্কেও ধারণাও নেই। অটো চালাতে গেলে ফিটনেস লাইসেন্স প্রয়োজন পড়ে না বলে বেশীরভাগ চালকদের ভাষ্য। তাছাড়া নিয়ম কানুন সম্পর্কেও বেশীরভাগের ধারণা নেই। অনেক সময় বিপরীত দিক থেকে আশা গাড়ির সংকেতও বুঝে না।
গ্রামে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অল্প টাকায় সহজলভ্য বলে অদক্ষ চালরা অনেকেই তিন চাকার অটোরিকশা গাড়ি কিনে বেকারত্ব ঘোচাতে উপার্জনের নেশায় অযোগ্য অবস্থায় রাস্তায় নেমে পড়ে। কোন ধরণের ট্রেনিংয়ের দ্বারস্থ হতে চান না। গ্রাম এলাকায় সহজে অটোরিকশা পাওয়া যায় বলে যাতায়াত অনেকাংশে সহজলভ্য সত্য। তবে বিপরীতে বিদ্যুতের ঘাটতির জন্যে দায়ী বলেও অনেকে যুক্তি তোলে ধরেন। তাই অল্প টাকায় বিনিময়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব ছোট যানবাহনের নিরাপদে কাছাকাছি ভ্রমণের লক্ষ্যে আমদানিকারক ও বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাধারণ জনগণ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে সস্তা ও সহজলভ্য এই অটোরিকশার অদক্ষ চালকদের অনেকেই রয়েছেন অপ্রাপ্ত বয়স্ক। অনেকে আবার শারীরিকভাবে চালানোর অনেকটাই অযোগ্য। কিশোর ও বয়োবৃদ্ধ থেকে শুরু করে প্রতিবন্ধীরাও এই সব তিন চাকার ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা নিয়ে রোজগারের উদ্দেশ্যে গ্রাম অঞ্চলে বের হতে দেখা যায়। তাদের সাথে কথা বললেই পরিবারের অভাব অনটনের কারণেই যেনো রাস্তায় নেমেছেন এমনি বাস্তবতার কঠিন চিত্র তুলে ধরে। যা একেবারে মানবিক দিক বিবেচনায় হতভম্ব হওয়ার মতোই। তবুও আইনের দৃষ্টিতে শিশুশ্রম ও প্রতিবন্ধী এমনকি শারীরিক অক্ষম ব্যক্তিরা দুর্ঘটনার জন্যে অধিক পরিমাণে দায়ী হয়ে থাকে। যে কারণে আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। তাদের জবাবের কাছে অভাব যেনো আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে অনেকটা অক্ষম। পরিবারের অভাব ঘোচাতেই যেনো তারা এই কঠিন পথ বেঁচে নিতে বাধ্য হয়েছে। বিশেষ করে শীতকালে শিশুদের কোমল হাতে শক্ত হাতল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। যে হাতে মানাতো খাতা আর বই কলম। ভূলে গেছে অনেক ধরণের খেলাধুলা। এছাড়াও বয়োবৃদ্ধ ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষাই রাখে না। অভাব যেনো এর জন্যে দায়ী।
সচেতন মহলের ভাষ্যমতে, তৃণমূলে দেশের দুর্নীতি কমে গেলে, পাচার রোধ হলে, গ্রাম-গঞ্জের মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে, নানান ধরনের গোঁড়ামি কমে এলে, ধনীগরিবের শ্রেণী বৈষম্য কমলে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ হলে, উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে, ভেদাভেদ ভুলে মমত্ববোধ বাড়ালে, প্রতিহিংসা কমলে অনটনের পরিমাণ নিঃসন্দেহে তুলনামূলক কমবে। সকলের মাঝে শান্তিও বিরাজ করবে। এতে করে কমে আসতে পারে শিশু শ্রম ও অযোগ্য শ্রম। কমে আসবে অটোরিকশার অযোগ্যদের শ্রমও।
আপনার মতামত লিখুন :