Agaminews
Dr. Neem Hakim

বৃষ্টির অভাবে হাওর অঞ্চলে বাড়ছে জনদুর্ভোগ 


দৈনিক আমার খবর প্রকাশের সময় : মার্চ ১৪, ২০২৫, ৬:৪৪ অপরাহ্ন /
বৃষ্টির অভাবে হাওর অঞ্চলে বাড়ছে জনদুর্ভোগ 

বাজিতপুরের মইতপুর ইটভাটা সংলগ্ন ও নিকলী বনমালীপুরের মেঠো রাস্তার দৃশ্য 

👉নিজেস্ব প্রতিবেদনঃ হাওর অঞ্চলে বৃষ্টির অভাবে চতুর্মাত্রিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৃষক ও তাদের পরিবার। ভোগান্তির শিকার আরোহী ও পথচারীরা।

কিশোরগঞ্জের নিকলী ও বাজিতপুরসহ বেশ কয়েকটি হাওর অঞ্চল ঘুরে বৃষ্টির অভাবে সৃষ্ট সমস্যা ও এর দরুন হাহাকারের চিত্র উঠে এসেছে সরেজমিনে। প্রধানত হাওরঅঞ্চলের বিক্ষিপ্ত স্থানের সেচ মেশিনেও পানির পরিমাণ কমে গেছে। পানির লেয়ার তুলনামূলক নিচের দিকে চলে যাওয়ায় উঁচু স্থানের সেচ নির্ভর বোরো চাষীরা অনেকটা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বৃষ্টির অভাবে অনেক এলাকার রাস্তাঘাট দিয়ে চলাচলকারী ছোট যানবাহনকে প্রচুর পরিমাণে ধূলিবালির মধ্যে দিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে রাস্তা অতিক্রম করতে দেখা যাচ্ছে। নিকলী বাজিতপুরের বেশ কিছু স্থানের রাস্তাসহ আশেপাশের উপজেলার কোথাও কোথাও ঘণকুয়াশার ন্যায় ধূলিতে চেয়ে যেতে দেখা গেছে। বিশেষ করে ইটভাটাগুলো মালিক পক্ষের লোকেরা দিবানিশি অতিরিক্ত বোঝাই করা টপ সয়েল আনা নেওয়ার সময়ে ট্রাকের উপর থেকে রাস্তায় গড়িয়ে পড়া অতিরিক্ত মাটিই ধুলাবালির জন্ম দিচ্ছে। বর্তমান দিনের চেয়ে রাতের বেলায় মাটি উত্তোলন বেশি হচ্ছে বলে অভিযোগ ট্রাক ও ভ্যাকু মালিকের দিকে। এছাড়াও হাওর অঞ্চলের মেঠো রাস্তাগুলো দিয়ে অতিরিক্ত মাটি বোঝাই করা ট্রাক চলাচলের কারণে বেহাল দশায় রাস্তাঘাট একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। ট্রাক থেকে গড়িয়ে পড়া এ সব মাটি বৃষ্টির অভাবে পাকা রাস্তায় যেমন ধূলি বালিতে পরিণত করে চলেছে অপরদিকে অল্প পরিমাণে বৃষ্টি হলেই মরণফাঁদেও পরিণত হয়ে উঠবে বলে ধারণা করে চলেছেন ছোট সাইজের যানবাহনের চালকসহ পথিকরা। মোটরসাইকেল আরোহীরাই সবচেয়ে বেশি ভয়ে থাকেন বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে নিকলী বাজিতপুর এলাকার প্রায় সব ক’টি ইটভাটা জনবহুল মূল রাস্তার পাশে। ফলে এ সব ইটভাটার নিকটবর্তী জনবহুল রাস্তাতেই অতিরিক্ত অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। তুলনামূলক বাতাসের পরিমাণটা বেড়ে গেলেই সমস্যার পরিমাণও বেড়ে যায়। এছাড়াও রাস্তা সংলগ্ন ফসলি জমির মালিকরাও অভিযোগ তুলেছেন বৃষ্টির অভাবে ধূলিবালির পরিমাণ তুলনামূলক বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত মাঠি বোঝাইয়ের ট্রাক বেশি বেশি চলাচলের কারণে ধূলিতে তাদের মরিচ, টমেটো, মিষ্টি কুমড়াসহ নানান ধরণের সবজি জাতীয় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। বাধা দিলেই ট্রাক, ভ্যাকু ও ইটভাটা মালিক কর্তৃক উল্টো চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরণের হুমকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিকলীর গুরই ও ছেত্রা এলাকার একাধিক স্থানের অসংখ্য কৃষক ও স্থানীয়দের অভিযোগ “ইটভাটা মালিরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে বাধা দেয়া যাচ্ছে না” প্রশাসন যেনো দেখেও দেখে না।

বাজিতপুর উপজেলার শশেরদিঘি এলাকার ফাতেমা, রোকেয়া, জাহানারাসহ অসংখ্য নারীরা অভিযোগের সুরে বলেন, টিউবওয়েল দিয়ে সচরাচর পানি না উঠার কারণে এই রমজানে অতিরিক্ত ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। এমন সমস্যা বাজিতপুর উপজেলার একাধিক স্থানে। ভোগান্তির কবলে পড়া স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বাড়ির পাশের হাওরগুলোতে বড় সাইজের গভীর নলকূপ চালু থাকলেই এ সমস্যা বেশি সৃষ্টি হয়। এছাড়াও একই ধরণের অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে নিকলীর ছেত্রা, গুরই এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে।

নিকলী উপজেলার গুরই ইউনিয়নের চেত্রা গ্রামের ইউপি সদস্য আবু মিয়া জানান, সরকারি সাবমারসিবল (টিউবওয়েল) দিয়ে কিছুটা পানি পেলেও তুলনামূলক কম গভীর টিউবওয়েল দিয়ে পানি কোনোমতেই উঠছে না। যার ফলে রান্নাবান্নাসহ যাবতীয় পানির কাজে সমস্যায় পড়েছেন জনগণ।

নিকলী থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী আরিফ উদ্দিনের কাছে রাস্তার পাশের জমির ফসলের ক্ষতি কিংবা রাস্তার কোনো ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ দেয়া হয়নি বলে উল্লেখ করেন। তবে অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখবেন বলে উল্লেখ করেন।

বাজিতপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকতা ফারাশিদ বিন এনাম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন গভীর নলকূপের জন্যে আবেদন করতে আসা একজনের কাছে এ ধরণের সমস্যার কথা শুনেছেন। পানির লেয়ার নিচে চলে গেলে এমনটি হতে পারে।

নপাশাপাশি ইটভাটা মালিকরা যদি রাতের বেলায়ও মাটি আনা নেওয়া করে তবুও তাদেরকে ঢেকে নিতে হবে। রাস্তার উপরে মাটি পড়লে ধূলি ও কাঁদা উভয় দিকেরই কুপ্রভাব রয়েছে।