Agaminews
Dr. Neem Hakim

নিকলীতে ৩ মাস ধরে ভূমি সেবা ব্যাহত! হাহাকার চরমে


দৈনিক আমার খবর প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৬, ২০২৫, ২:৫৯ অপরাহ্ন /
নিকলীতে ৩ মাস ধরে ভূমি সেবা ব্যাহত! হাহাকার চরমে

বিশেষ প্রতিনিধিঃ নিকলীতে ৩ মাস ধরে ভূমি সেবা গ্রহন করতে না পারায় সেবা প্রত্যাশীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাদের হাহাকারের চিত্র ভিন্ন ভিন্ন বলে জানা গেছে।

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার জারইতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গত ৩ মাস যাবৎ জনগন কোনো খাজনার চেক কাটতে পারছেন না সহকারী ভূমি কর্মকর্তা না থাকায়। ভূমি উপ-সহকারী পদে বহাল থাকলেও তার হাতে নেই সেবাদানের ক্ষমতা। স্থানীয় অফিস সূত্রে জানা গেছে গত ২০ অক্টোবর ২০২৪ সালে জারইতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন পারভেজ পিআরএলে যাওয়ার পরপরই ২১ নভেম্বর পাশ্ববর্তী বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে বদলি হয়ে সাফিউদ্দিন আহমেদ সর্বশেষে নিজ উপজেলাতে আসেন। পেনশন নেওয়ার উদ্দেশ্যেই জারইতলাতে যোগদান করেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। একমাস জারইতলাতে থাকাকালীন সময়ে সার্ভার জটিলতার কারণে কোনো খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন করের দাখিলা সেবা তিনি গ্রহীতাদের দিতে পারেননি বলেও আলোচনা রয়েছে। পরবর্তীতে বিগত ৩১ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে সাফিউদ্দিন আহমেদও পিআারএলে চলে যান। এরপর থেকে অদ্যাবদি কাউকে জারইতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে পদায়নও করা হয়নি বলে সরেজমিনে তথ্য মিলে। এই অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েছে অত্র ইউনিয়নের ভূমির সেবা নিতে আসা সকল জনগণ। জানা গেছে ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনার চেক ছাড়া সাবরেজিস্টার অফিসে কোনো দলিলও রেজিষ্ট্রেশন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে হাহাকারের চিত্রও বেড়েই চলেছে। সচেতন মহলের ভাষ্য এমন অভিযোগের চিত্র শূধু নিকলীর জারইতলাতেই নয় বরং এটা দেশের বিভিন্ন এলাকার একটি খন্ড চিত্র।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে জেলাতে দীর্ঘদিন ধরে চার উপজেলায় সহকারী কমিশনার(ভূমি) নেই। ১৩ উপজেলায় মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর, নিকলী, অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন। এ চার উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) নেই। ব্যাহত হচ্ছে অনেকাংশে ভূমিসেবা কার্যক্রম। প্রায় ১২ বর্গ কি.মি জনঘনত্বের এ জেলায় ৮টি পৌরসভা ও ১০৮টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। জেলার ৮৪টি ভূমি অফিসে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রয়েছে ৫০জন। তবে উপ-সহকারী থেকে সহকারীতে পদায়ন সুযোগ মিলছে নতুন করে ৩৩ জনের। পদোন্নতির পর তাদের নিয়োগ দেয়া হলেই সমস্যা সাময়িক সমাধান হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন স্থানীয় অফিসের দায়িত্বে থাকা অধীনস্থরা।

ভূমি সেবা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৬ জুন জনসেবায় জাতিসংঘ পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড পায় এই ভূমি মন্ত্রণালয়। শুধু তাই নয় পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০ বিজয়ী হিসেবে বিশ্বের মধ্যে সর্বপ্রথম বাংলাদেশী ভূমি মন্ত্রণালয় প্রথম। তবুও লোকবল সংকটে আর সেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের মাঝে রয়েছে দীর্ঘদিন থেকেই সীমাহীন হয়রানির অভিযোগ। গুঞ্জন রয়েছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ভিন্ন অজুহাতে অর্থনৈতিক ফায়দা লুটার বিষয়েও।

এই সেক্টরে নারী অফিসারের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি থাকার কারণে কিশোরগঞ্জ সদরের ন্যায় মাতৃকালীন নিয়মিত ছুটিতে থাকায় সেবা প্রত্যাশীদের সমস্যার চিত্রটাও ব্যতিক্রমী হয়ে থাকে। তাই সচেতন মহলের জোর দাবি গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টরে তদারকি আরও অধিক জোরদার করা প্রয়োজন।

জারইতলা ইউনিয়নের ধারীশ্বরের সৈয়দ রিয়াজুল হক ওরফে এমদাদের ভাষ্যমতে প্রায় ৩ মাস আগে অনলাইনে খাজনার দাখিলার জন্যে আবেদন করলেও সার্ভার সমস্যা ও পরবর্তী নায়েব না থাকায় এখন পর্যন্ত ভূমি অফিসেই ঝুলে রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ ফাইলটি।

এছাড়াও ৬ ফেব্রুয়ারি অফিস চলাকালীন জারইতলার ফরিতুস সরকার, ভূনা নয়া হাটির রফিক, আঠারো বাড়ীয়ার নয়ন ও  গহের আলীসহ অসংখ্য সেবা প্রত্যাশীদের ভীড় করতে দেখা যায় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। কাজ আদায় করে নিতে না পারায় বাধ্য হয়ে ফীরে গেলেও দুর্ভোগ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ধরণের নির্দিষ্ট সময়সীমার বিষয় জানতে পারেননি তারা। তাদের ন্যায় এমন অসংখ্য জরুরি সেবা প্রত্যাশীরা হতাশায় ভেঙ্গে পড়েন।

জারইতলার উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য ভূমি সেবা প্রত্যাশীরা সেবা নিতে আসলেও তার কাছে সেই কাঙ্খিত সেবা প্রদানের সুযোগ নেই। বাধ্য হয়ে তাদেরকে বিদায় দিতে হচ্ছে। এছাড়া অফিস সহায়ক শিল্পী রাণী বর্মনও একই তথ্য প্রদান করেন। যথাসময়ে নিয়মিত অফিসে এলেও নামজারি  ও চেক কাটার অথরিটি না থাকায় তারা সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

নিকলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া আক্তার উল্লেখ করেন কর্মরতদের প্রমোশনজনীত কারণে একটুখানি বিলম্ব হচ্ছে। তবে অচিরেই এই সমস্যারও সমাধান হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানকে ফোনে না পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহীদ হাসান খান এক প্রশ্নের জবাবে জানান, উপজেলা সহকারী ভূমি নেই ৪টিতে। এছাড়াও ইউনিয়ন উপ-সহকারী থেকে সহকারী পদে যাদের পদোন্নতি হয়েছে তাদের যোগদানের পর সমস্যার সমাধান হবেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।