মেলা কমিটির সভাপতি আ’লীগ নেতার নেতৃত্বে যাত্রাপালার আয়োজন
হাওরঅঞ্চল থেকে বিশেষ প্রতিনিধিঃ নিকলীতে গ্রাম্য মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে চলে অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতি কোনোমতেই চলতে দেয়া হবে না। এমন অভিযোগ প্রশাসন বরাবরে স্থানীয় একাংশের পক্ষ থেকে। অপরদিকে অপসংস্কৃতি হবে না তবে সংস্কৃতিকে কোন মতেই বন্ধ করা যাবে না। সংস্কৃতি বিনোদন প্রেমিদের মনের খোরাক। সংস্কৃতি বন্ধ হলে ভিন্ন ভিন্ন অপরাধ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গ্রাম্য মেলা প্রাচীন সংস্কৃতি। স্থানীয়দের বাৎসরিক মিলন মেলাও উল্লেখ করা হয়। এ মেলা উপলক্ষে সাক্ষাৎ হয় শহর-নগরে এমনকি দূরদূরান্ত থেকে আগত স্বজনদের সাথে। তাই এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে এ মর্মে অনুমতি কামনা করেছেন প্রশাসনের। প্রশাসনের ভাষ্য গ্রাম্য মেলার অনুমতি থাকলেও অশ্লীল অভিনয় ও নগ্ন নৃত্যসহ মাদক ও জুয়ার আসর কোন মতেই সম্ভব নয়। সামাজিক বৈধ মিলন মেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায়ের লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও প্রশাসন সূত্র নিশ্চিত করে।
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার কারপাশা ইউনিয়নের নানশ্রী গ্রামের চেয়ারম্যান বাজারে গত ১৪ বছর ধরে শীতের মৌসুমে অশ্লীল যাত্রা গান ও জুয়ার আসর অনুষ্ঠিত হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই এ সবের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে নানশ্রী বাঘুয়াখালী ২নং ওয়ার্ডের আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মেলা কমিটির সভাপতি আওলাদ এ সবের মূল দায়িত্বে রয়েছেন।
এ মেলায় একশ’ থেকে তিনশ’ টাকা মূল্যের টিকেট বিক্রি করে সারা রাত চলে অশ্লীল নাচ গান ও জুয়া মদের আসর। অতীতে একাধিক সময়ে যাত্রা চলাকালে অত্র এলাকায় রাতে নানাবিধ চুরির ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও সংঘাতসহ হত্যার ঘটনার কথাও উল্লেখ করা হয়। এ মর্মে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ ও নিরিহ লোকজনসহ ইমাম ওলামাদের একটি অংশ অতীতের এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তির ভাবনা থেকে যাত্রাপালা বন্ধের বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। গত ৩১ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন। অনুলিপি দেন পুলিশ সুপার, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা, উপজেলার দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তা, অফিসার ইনচার্জসহ গণমাধ্যমকর্মীদের। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় প্রশাসন সরেজমিনে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে অনুসন্ধানী তদন্তে নামে। নজরদারিতে রাখে সার্বিক বিষয়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করে যাত্রাপালার লক্ষ্যে। প্রাথমিকভাবে তিন দিনের জন্যে পূর্ব প্রস্তুতিমূলক চর্চাও করে। অপরদিকে যাত্রার বিরুদ্ধে নানশ্রী বাজারে বিশাল প্রতিবাদ সভারও প্রস্তুতি নেয় স্থানীয় ইমাম উলামা পরিষদসহ একাংশের জনগণ। সব মিলিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। বিচক্ষণতার সাথে প্রশাসন উভয় পক্ষকে ডেকে শান্তির লক্ষ্যে একটি সুষ্ঠু সমাধান দেন বলেও স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করে।
কারপাশা ইউনিয়নের নানশ্রী গ্রামের চেয়ারম্যান বাজার এলাকার এ মেলা কমিটির সভাপতি ও সাবেক আ’লীগ নেতা আওলাদ হোসেন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মেলায় কোন ধরনের অশ্লীলতা হবে না। এটা দীর্ঘ ১৪ বছরের সামাজিকতা ও ঐক্যবদ্ধের বাৎসরিক একটি মিলন মেলা। যাত্রা হলেও এখানে অশ্লীল নিত্য এবং জুয়া মদের কোনো আসর থাকবে না। ২২২ জনের স্বাক্ষরিত একটি কমিটিও স্থানীয়দের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমতি মিললেই এ মেলা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নিকলী উপজেলা উলামা পরিষদের সাংগঠনিক ও কারপাশা ইউনিয়ন উলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি মিজবাহ উদ্দিন রাহমানি বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে নেন স্থানীয় প্রশাসন। আমাদের অধিকাংশ দাবি মেনেই অশ্লীলতা পরিহারের পাশাপাশি মদ ও জুয়া ব্যতীত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথা হয়েছে। আমরাও এলাকায় চাই শান্তিপূর্ণ সাংস্কৃতিক পরিবেশ বজায় থাকুক।
নিকলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি বদরুল মোমেন মিঠু বলেন, রাষ্ট্রীয় আইন মেনে চলা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেক্ষেত্রে বৈধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার ক্ষমতাও রাষ্ট্রীয়ভাবে উল্লেখ রয়েছে। রাষ্ট্রীয় অনুমতির পক্ষে তিনি সদা সাপোর্ট করেন। তবে মাদক ও জুয়াসহ অশ্লীলতার পক্ষে তার কোন ধরণের সাপোর্ট নেই বলেও দাবি করেন।
নিকলী থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী আরিফ উদ্দিন বলেন, উপর মহলের অনুমতি সাপেক্ষে মেলা হলেও কোন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ হতে দেবে না স্থানীয় প্রশাসন।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা পাপিয়া আক্তার জানান, বিষয়টি আমাদের সম্পূর্ণ নজরদারিতে রয়েছে। অসামাজিক কার্যকলাপের কোনোই সুযোগ নেই। অনুমতি সাপেক্ষে সামাজিক কার্যকলাপে কোন বাধা নেই বলেও উল্লেখ করেন।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চোধুরী (বিপিএম) এই মর্মে সম্পূর্ণ অবগত আছেন বলে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি গ্রাম্য মেলা এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের অনুমতি থাকলেও সামাজিকতার নামে কোনো ধরণের অশ্লিলতা তিনি হতে দিবেন না বলে উল্লেখ করেন।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানকে গত ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন :