Agaminews
Dr. Neem Hakim

নিকলীতে দুর্বৃত্তের লাথিতে গর্ভপাত! সম্পদ যেনো কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, হুমকিতে পরিবার


দৈনিক আমার খবর প্রকাশের সময় : মার্চ ১২, ২০২৫, ৮:২০ পূর্বাহ্ন /
নিকলীতে দুর্বৃত্তের লাথিতে গর্ভপাত! সম্পদ যেনো কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, হুমকিতে পরিবার

নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ নিকলীতে আদালতে মামলা চলমান। পুলিশি বাধা অমান্য করেই দুর্বৃত্তের ঘর তৈরি। বাধা দেওয়ায় তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বাসহ একাধিক শিশু, যুবতী ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। আহতদের প্রথমে নিকলী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরবর্তীতে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়। রেফার্ডকৃত আমেনা, আরেয়া ও তারমিন নামের ৩ নারীকে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে দুর্বৃত্তর কর্তৃক আক্রমণের শিকার তারমিন আক্তারের গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ফলে প্রবাসীর স্ত্রী তারমিনের অবস্থাও অনেকটা শোচনীয়। এ সময়ে মারধরের পাশাপাশি ছিনিয়ে নেয় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার স্বর্ণালংকার। একাধিক নারীকে প্রকাশ্যে দিবালোকে বিবস্ত্র প্রায় টেনে হেঁচড়ে নির্যাতন চালানো হয়। এ ঘটনায় নিকলী থানায় শিশু মৃত্যুসহ মারধরের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভিকটিম তারমিন আক্তার।

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের দক্ষিণহাটি এলাকার সুলতান গংদের সাথে পাশ্ববর্তী সালামের পরিবারের জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা মোকদ্দমা চলে এসেছে প্রায় দুই মাস ধরে। মামলা মোকদ্দমা চলমান সত্ত্বেও ৭ মার্চ সকাল আনুমানিক ৭ টার সময়ে জোর পূর্বক জায়গা দখল করে ঘর তৈরির চেষ্টা চালায় সুলতানরা। এ সময়ে অসহায় বৃদ্ধ সালাম বাধা দিলে তাকে এবং তার স্ত্রীকে মারধরে আহত করে। এমনকি ঘরের সন্মুখ থেকে অন্তঃসত্ত্বা পুত্র বধুসহ একাধিক শিক্ষার্থীদেরও ধরে নিয়ে মারধর করে। চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিতের চেষ্টা চালায়। এ অবস্থায় আইনী সহযোগিতা নিতে অন্তঃসত্ত্বা তারমিন আক্তার ৯৯৯ নাম্বারে কল করে ৭মার্চ সকাল ৯ টার দিকে। টানা ৯ মিনিট ৪১ সেকেন্ড ব্যাপী কথার পরে নিকলী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ঘর উঠানোর পাশাপাশি মারধরের আলামত দেখতে পান। এ সময়ে সুলতান ও তার ভাইদের মারধরের ভিডিও এবং স্থির চিত্রে ঘটনার বাস্তবতা দেখতে পান। ঘটনার সময়ে সুলতান ও তার ভাই জহিরে অন্তঃসত্ত্বার তলপেটে সজোরে লাথি দিলে অকাল গর্ভপাত ঘটে। একাধিক হাসপাতালও স্থানীয় সূত্রে এ বাস্তবতার তথ্য মিলে। পাশাপাশি পুলিশ সূত্রও স্বীকার করেছেন আদালতে মামলা এবং পুলিশি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জোরপূর্বক ঘর তৈরি ও মারধরের বিষয়ে। এ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে নিকলী থানার এএসআই আমজাদ হোসেনও ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন বলে জানান।

এ ঘটনায় সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত ভিকটিমের স্বামী ওবাইদুল তার অনাগত সন্তান হত্যার বিচারসহ পরিবারের উপর বর্বর জুলুম নির্যাতনের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের পাশাপাশি কঠিন বিচারেরও দাবি জানান।

ভিকটিমের শাশুড়ি আলেয়া আক্তার বলেন, আদালতের নির্দেশে নিকলী থানার পুলিশ ঘর তৈরিতে আইনগতভাবে বাধা সত্ত্বেও প্রতিপক্ষ সুলতান ও তার ভাইয়েরা ঘর তৈরির কাজ শুরু করে। এ সময়ে তার স্বামী সালাম মিয়া বাধা দিলে তাকেও মারধর করে। ডাক চিৎকারের সহিত বাধা দিলে অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূসহ তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে রোবাইদাকেও মারধর করে। এছাড়াও ৬০ উর্ধ্ব দেবর আবু হাসান ও তার স্ত্রী আমেনাসহ ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে সাফাতুল্লাহকেও মারধর করে। চিনিয়ে নেয় স্বর্ণলঙ্কার। আলেয়া ভয়কাতুরে আরও জানান তার দুটো সন্তানই প্রবাসে অবস্থান করায় এ ঘটনার পর থেকে নারীরা বর্তমানে হুমকিতে আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ইকবালসহ বেশ কতক নারী পুরুষ এ নারকীয় তান্ডবের কথা তুলে ধরে কঠিন বিচারের দাবি জানান। তাদের ভাষ্যমতে সুলতান, আবু তাহের, জহির, রেজাউল ও তাজুলসহ তাদের পরিবারের ডজন খানেক নারী-পুরুষ মিলে এ তান্ডব লীলা চালিয়েছেন।

মারধরের তান্ডব লিলার বিষয়ে সুলতানকে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করার জবাবে চাচাকে মারধরের কথা স্বীকার করলেও নারীদের মারধের কথা সম্পূর্ণই অস্বীকার করেছেন। তবে নারীদের উপর মারধরের ভিডিও এবং স্থির চিত্রের কথা উল্লেখ করতেই চুপসে যান। এছাড়াও মামলার পাশাপাশি পুলিশের বাধা স্বত্বেও ঘর তৈরির বিষয়টি এক পর্যায়ে স্বীকার করেছেন।

নিকলী থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী আরিফ উদ্দিন বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের সত্যতা পাওয়ায় মামলা নেয়া হয়েছে বলে জানান। এছাড়াও আসামিদের গ্রেফতার বিষয়ে অভিযান চলমান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।