Agaminews
Dr. Neem Hakim

অসহায় শিশুর চোখে কেনো এত অশ্রু 


দৈনিক আমার খবর প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৫, ৫:৪৬ অপরাহ্ন /
অসহায় শিশুর চোখে কেনো এত অশ্রু 

নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ পথশিশুদের চোখে কেন এত অশ্রু, কেন করে শিশু শ্রম বিক্রি, কেনইবা বাধ্য হয়ে জড়িয়ে পড়ে কিশোর অপরাধে। এর জন্যে দায়ী কারা?

পৃথিবীতে অপরাধী হয়ে কেউ জন্ম নেয় না। প্রতিটি মানুষেরই মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের প্রয়োজন পড়ে। যখন তার মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে বাধাগ্রস্ত হয়। তখন তা পূরণের লক্ষ্যে নানাবিধ পন্থা অবলম্বন করে। অভাব ঘোচাতে প্রথমে জন্ম স্থানেই নানান ধরণের অবলম্বন খুঁজে। কেউবা কাজের সন্ধানে ছুটে দূরদূরান্তে। এলাকায় যখন চাহিদা পুরণের আশা নস্যাৎ হয়ে যায়, মৌলিক মানবিক অধিকারসহ নানান সুযোগ সুবিধা হারায় তখনি বাধ্য হয়ে ছুটে শহর ও নগরের পানে। চাহিদা মেটানোর নেশায় অনেকে আবার বেপোরোয়াও হয়ে উঠে। অতিরিক্ত চাহিদার তাগিদ থেকেই জন্ম নেয় লোভ-লালসারও। অতিরিক্ত লোভ-লালসার মোহে  বিবেকের তাড়নায় অনেকে অপরাধেও জাড়িয়ে পড়ে। মৌলিক মানবিক চাহিদার ঘাটতি পূরণের কোনো উপায় না পেয়ে অনেকে আবার অপরাধের পথও বেছে নেয়। অধিকাংশ শিশুর অভিভাবকদের অবহেলা, অসচেতনতা আর দেখভালোর অভাব থেকেও লেখাপড়ার সুযোগ হারায়, জড়িয়ে পড়ে অপরাধে। যে বয়সে লেখাপড়া করার কথা, সে বয়সে অনেক শিশুকে জীবিকার সন্ধানে ছুটে বেড়াতে হয়। দরিদ্রতার কারণে অনেক শিশু পুষ্টিহীনতায় ভোগে এমনকি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভবঘুরেও হয়ে যায়। সরেজমিন দেখা যায়, কিশোরগঞ্জের হাওর বেষ্টিত নিকলী, বাজিতপুর, অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন, কুলিযারচর, ভৈরব এলাকাসহ তৎসংলগ্ন হাওর অঞ্চলের শিশুরা শ্রম বিক্রি করে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন উপায়ে। এদের পরিচয় নিলেই ধরা পড়ে অধিকাংশ শিশু অনাথ ও অসহায়। অভাবের তাড়নায় এখানকার অনেক শিশু মৌলিক মানবিক অধিকার বঞ্চিত হয়ে জীবিকার সন্ধানে কঠিন কাজে নিয়োজিত হয়ে যায়। কেউ হাওরে রাখালিয়া সেজে গরু ছড়ায়। কেউ চায়ের স্টল কিংবা বিভিন্ন ধরনের দোকানে কাজ করছে। এদের অনেকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাত কাটাচ্ছে।

অনেকে আবার কাজের সন্ধানে পাড়ি দেয় শহরে। শহরে কাজের সুযোগ না পেয়ে হয়ে যায় ভবঘুরে। ক্ষুধার তাড়নায় পরিস্থিতির শিকার হয়ে কেউবা চুরি ছিনতাইয়ের মতো অসামাজিক পথ বেছে নেয়।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে খাবারের অভাবে, মা-বাবার অকাল মৃত্যুতে, অভিভাবকদের দেখভালোর অভাবে, পিতা মাতার সংসার বিয়োগে গ্রামের শিশুরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হয়ে জীবিকার তাগিদে সস্তায় শ্রম বিক্রিতে জড়িয়ে পড়ে।

নিকলী বাজিতপুর ও অষ্টগ্রামসহ আশেপাশের বেশ কিছু এলাকার শিশুদের সাথে কথা হলে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে গ্রামে অনেকে রাখাল সেজে মাঠে গরু ছড়ায়, হাওরের খালবিলে মাছ ধরে বিক্রি করে, চায়ের দোকানে, গ্যারেজে, কৃষিকাজে, ভ্যারাইটিজ দোকানে, এমনকি গাড়ির হেলপারসহ নানান কঠিন কাজেও যোগান দিচ্ছে অনাথ-অসহায় শিশুরা। তবে শহরে বসবাসকারী অসংখ্য শিশুদের সাথে একান্তে কথা হলে তাদেরকে আক্ষেপের ভাষায় বলতে শোনা যাচ্ছে গ্রামে থাকার অনেক চেষ্টা তারা করেছে। ব্যর্থতায় বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে শহরে চলে এসেছে। এখানে তারা আদর মায়া মমতা থেকে বঞ্চিত হলেও কোন না কোন উপায়ে দুবেলা খাবার জুটে বলে দাবি করে। গ্রামে ভালো লাগলেও সেই সুযোগ কম থাকে বলেও জানায়। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে এসব শিশুদের একাংশ ঝুঁকে পড়ে নেশার জগতেও। অনেকে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধেও জাড়িয়ে পড়ে। অনেকে ফুটপাথের রাস্তায়, রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাত কাটায়। অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান পড়ে অসহায়ের মতো ঘুরে বেড়ায়। অতিরিক্ত শীতে, ঝড় বৃষ্টিতে নিদারুণ কষ্টের মাঝে দিবারাত্রি কাটে তাদের। ক্ষুধার জ্বালায় অনেকে আবার ভিক্ষাবৃত্তিতেও নেমে পড়ে। কাউকে কাউকে জনবহুল সড়কে ঘুরে ঘুরে ফুল বিক্রি করতেও দেখা গেছে ঝুঁকি নিয়ে। পুষ্টিহীনতায় ভোগা এসব শিশুরা পুষ্টিকর খাবার এবং সঠিক চিকিৎসার অভাবে রোগেশোকে ভোগে অধিক পরিমাণে। এসব পথশিশুর বিষয়ে বেশ কয়েকটি সংগঠনের সংশ্লিষ্ট ও সমাজকর্মীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক ঘাটতির বড় কারণ হলো অভিভাবকের অসচেতনতা, অনাদর-অবহেলা, মৌলিক মানবিক চাহিদার ঘাটতি। পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় স্বজন কিংবা প্রতিবেশীদের দায়িত্বহীনতাও এর জন্য দায়ী। শিশুদেরকে অভিভাবকের শুন্যস্থান পূরণের পাশাপাশি সামাজিক সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের প্রয়োজন। বিভিন্ন সংগঠন ও স্থানীয় বিত্তশালী ব্যক্তিদের এ বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। তা হলেই শিশুশ্রম কমে আসবে ধীরে ধীরে। তবেই পথ শিশুদের চোখের অশ্রু নিবারণ হবে।